সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে ‘তুলে নিয়ে’ সরকারের কী লাভ হল, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সাংবাদিকের দোষ কী, সেটিও জানতে চেয়েছেন তিনি।
শামসকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পুলিশের যে সংস্থার বিরুদ্ধে, সেই সিআইডির কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, “এগুলো আপনারা আরো ক্ষতি করছেন সরকারের। সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরার কারণে একজন সাংবাদিককে যদি হেনস্তা করতে হয় সেটা কি সরকারকে কোনো প্লাস পয়েন্ট দিচ্ছে, কোনো ক্রেডিট দিচ্ছে? নো ওয়ে।”
বুধবার(২৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি শামসের বিষয়েও কথা বলেন ফখরুল।
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন নির্বাচন কমিশনের আলোচনার চিঠির বিষয়ে দলের অবস্থান জানাতে। জানান, তাদের দলের স্থায়ী কমিটি জানিয়েছে, এই সংলাপে যাবেন না তারা।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেখানে একজন শ্রমজীবী মানুষের করা একটি মন্তব্য নিয়ে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর। সেভাবেই শোসাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক ছিলেন শামস।
পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।
এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে তেজগাঁও থানায় শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন এক যুবলীগ নেতা। ভোরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে সিআইডি পরিচয়ে শামসকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়, যদিও এই বিষয়টি স্বীকার করেনি সংস্থাটি।
ফখরুল বলেন, “আজকে ভোরে একজন সাংবাদিককে সিআইডি বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে… এটা ভয়াবহ ঘটনা। আমি গতকাল রাতে যেটা দেখলাম সময় ও একাত্তর টেলিভিশনে যে, তারা একটা ফিচার করেছে যে, এই মুহূর্তে কেনো সরকারকে বিব্রত করার জন্য এই ধরনের একটা সে (শামস) রিপোর্ট করেছে। কী অপরাধ করেছেন সেই সাংবাদিক… সেটাই তো বুঝলাম না।”
তিনি বলেন, “আমার কথা হচ্ছে যে, সত্য যে ঘটনা সেই ঘটনা সে তুলে ধরেছে। একজন মানুষের যে উক্তি সেই উক্তিটা তুলে ধরেছে। ২৬ মার্চের দিন এটা করা হয়েছে যে, স্বাধীনতাকে অপমান করা হয়েছে, তার মানহানি করা হয়েছে… এটা বলা হচ্ছে।
“একজন মানুষ যদি স্বাধীনতার দিন ক্ষুধার্ত বোধ করে, সে যদি বঞ্চিত বোধ করে এবং সে যদি ওই কমেন্টটা দেয় যে, আমার এই দেশ স্বাধীন হয়ে কী লাভ হল, কী অপরাধ হয়েছে, অপরাধটা কোথায়?”
শ্রমজীবী মানুষের সেই বক্তব্যে তার খেদ ঝরে পড়েছে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতা। এর মানে ‘স্বাধীনতাবিরোধিতা নয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “যে স্বাধীনতা খেতে দেয় না, যে স্বাধীনতা এভাবে মানুষকে নির্যাতন করে, নিপীড়ন করে, হত্যা করে সেই স্বাধীনতা সম্পর্কে তো প্রশ্নই উঠতে পারে। তা লাভ কী? খেদোক্তি যেটাকে বলে। তার অর্থ তো এই নয় যে, সে স্বাধীনতাবিরোধী।”
অবিলম্বে শামসের মুক্তি দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ইতিহাস বলে, বাংলাদেশে সবসময় এই ধরনের কাজ যে সরকারগুলো করেছে, পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে কেউই কিন্তু রক্ষা পায়নি। এটা করে তো সরকারের লাভ হবে না।”
র্যাব হেফাজতে মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলেও মনে করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপনের দাবি জানাচ্ছে এবং সুলতানা জেসমিনকে হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছে।”
বিএনপি নেতা বলেন, “তার মৃত্যু আবারও প্রমাণ করেছে যে, এই সরকারের অধীনে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যথেচ্ছাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই চলেছে।’’
‘ভোটে ওয়াকওভার নয়, লেভেল প্লিয়িং ফিল্ড চাই’
এক প্রশ্নে ফখরুল বলেন, তারা নির্বাচনের মাঠে ছেড়ে দেওয়ায় বিশ্বাসী নন।
“আমরা ওয়াকওভারে কখনই বিশ্বাস করি না। আমরা যেটা বিশ্বাস করি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ফর ইলেকশন। আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।
“আগে গদ্যাগ করেন। সংসদ বাতিল করেন, নতুন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নির্বাচন হবে… একশ বার নির্বাচনে যাব। আমি যে রাজনৈতিক দল করি, যে লক্ষ্য নিয়ে করি রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়ে জনগণের কাজ করব, উন্নয়ন করব। তার জন্য তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।”
২০১৪ সালে নির্বাচন বয়কট করলেও পরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথাও তুলে ধরেন ফখরুল। বলেন, “২০১৮ সালে আমরা ওয়াকওভার তো দিতে চাইনি। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে একবার না, দুই দফা তিনি সকলের সামনে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, একদম নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, কোনো রকমের অত্যাচার-নির্যাতন হবে না, পুলিশি নির্যাতন হবে না, প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে, ভোটে কারচুপি-ছলচাতুরি এগুলো হবে না।
“কী লাভ হয়েছে। এখন আপনি যা ই বলেন, যত সুন্দর ভাষায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার যাই বলেন কী হবে?”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন না হলে কী হবে, সে বিষয়ে ‘জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে’ বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।