শিরোনাম
Home / আদালত / মৌখিক অভিযোগ পেয়ে র‍্যাব কাউকে তুলে নিতে পারে কিনা প্রশ্ন হাইকোর্টের

মৌখিক অভিযোগ পেয়ে র‍্যাব কাউকে তুলে নিতে পারে কিনা প্রশ্ন হাইকোর্টের

মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব কাউকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে কি না—সেই প্রশ্ন রেখেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ‘এখানে র‍্যাবের এখতিয়ার অতি গুরুত্বপূর্ণ। র‍্যাবের জন্য আইন আছে, আইন দেখবে। কেউ যেন অকারণে “ভিকটিম” না হন, আবার কেউ যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন।’

নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র‍্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারিক তদন্ত চেয়ে করা রিটের শুনানিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) এ কথা বলেন।

হাইকোর্ট বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে ভুক্তভোগীকে (সুলতানা জেসমিন) ২২ মার্চ তুলে নেওয়া হয়। তখন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্ধারিত কোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়নি।

সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাঁকে আটক করে র‍্যাব। ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। র‍্যাবের ভাষ্য, প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল। আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

স্বজনদের অভিযোগ, আটক হওয়ার আগে সুলতানা জেসমিন সুস্থ ছিলেন। র‍্যাবের হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

‘উইমেন ডাইস ইন র‍্যাব কাস্টডি’ শিরোনামে দ্য ডেইলি স্টার-এ গত সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের একই বেঞ্চে তুলে ধরেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্ত (পোস্ট মর্টেম) প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য দেখতে চান। রাষ্ট্রপক্ষকে গতকাল এসব কাগজপত্র ও তথ্য দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি পত্রিকার খবর আদালতের নজরে আনা আইনজীবীকে লিখিত আবেদন প্রস্তুত করে নিয়ে আসতে বলা হয়। এ অবস্থায় মনোজ কুমার ভৌমিক ওই রিট করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জেসমিনের মোবাইল ফোন থেকে তথ্য উদ্ধার, হাসপাতালে নেওয়া ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং সুরতহাল প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি ও কাগজপত্র দাখিল করে। তবে ভুক্তভোগীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষ সময়ের আরজি জানায়। আদালত আগামী ৫ এপ্রিল দুপুরে শুনানির জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছেন।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

পরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর (সুলতানা জেসমিন) সুরতহাল প্রতিবেদনের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এলে সবচেয়ে ভালো হয়। আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে বলেছেন আদালত।

সবার মনে একটি প্রশ্ন, তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কি না

এর আগে শুনানিতে আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘কোনো বিষয় এখানে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। ভুক্তভোগীকে ২২ মার্চ ধরে নেওয়া হলো, তারপর আটকে রাখা হলো বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এই মামলা পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করবেন। এখানে র‍্যাবের তদন্ত করার কোনো অধিকার নেই, যা বেআইনি। আইনে আছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করতে হবে। কিন্তু তা হয়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন বলে পত্রিকায় প্রতিবেদনে এসেছে। মৃত্যুর মতো একটি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও র‍্যাবের দায়িত্ব ছিল মামলা করার, কিন্তু তা করেনি। সামগ্রিক বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে নিরপেক্ষ তদন্ত চাচ্ছি।’

আদালত বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছাড়া ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা ছিল কি? তখন মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, অন্য কোনো মামলা ছিল না।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ২৪ ঘণ্টার বেশি র‍্যাব হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে রিট আবেদনকারী বললেন, এটি তিনি কোথায় পেলেন? এটি সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। ২২ মার্চ বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে তাঁকে ধরা হয়। সেদিন সোয়া একটার দিকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেদিন রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারায় পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার করা যাবে বলা আছে।

আদালত বলেন, কাগজপত্রে সাধারণ মানুষের সম্মুখে ভুক্তভোগী অভিযোগ স্বীকার করেছেন বলা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এরপর দোকানে গিয়ে ওই নারীর মোবাইল ফোনে থাকা ডকুমেন্ট প্রিন্ট করা হয়।

আদালত বলেন, যখন তাকে তুলে নেওয়া হয়, তখন কোনো মামলা ছিল না দেখা যাচ্ছে। থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে যায়। তার মানে হচ্ছে কোনো জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে কি?

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, অন্য কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। কারও বিরুদ্ধে অপরাধের খবর পেলে তা আমলযোগ্য অপরাধ হলে পুলিশ বা র‍্যাব ধরবে না?

আদালত বলেন, প্রশ্ন, হেফাজতে থাকা অবস্থায় নারী মারা গেছেন? তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তিনি র‍্যাব হেফাজতে মারা যাননি, হাসপাতালে মারা গেছেন। আদালত বলেন, আপনার হেফাজতে ছিল। সন্দেহ হলে ধরবেন, তবে তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় হতে হবে।

শুনানির একপর্যায়ে ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের প্রসঙ্গ টানেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্যাতনের ক্ষেত্রে আদালতে তৃতীয় পক্ষ মামলা করতে পারে।

অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আপনার কাছে প্রশ্ন, যখন কোনো নাগরিক যতই সহিংস অপরাধ বা যত জঘন্য অপরাধ করুক না কেন, তার জন্য প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু কথা হচ্ছে দিনের শেষে সবকিছু যথাযথ প্রক্রিয়ায় হতে হবে। রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, ভুক্তভোগীকে যখন তুলে নেওয়া হয়, তখন আপাতদৃষ্টিতে কোনো মামলা ছিল না।’

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে পাওয়া যাবে। তাহলে বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে।

আদালত আরও বলেন, সবার মনে একটি প্রশ্ন, তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কী না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এমন ধারণা যেন না হয়। আদালত বলেন, অবশ্যই, তা না হলে আপনার প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে।

র‍্যাবের তদন্ত কমিটি

নওগাঁয় র‍্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। সোমবার(২৭ মার্চ) র‍্যাব সদর দপ্তর এই তদন্ত কমিটি গঠন করে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় সংস্থার (র‍্যাব) সদস্যদের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে র‍্যাবের কারও বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তদন্তে কিছুটা সময় লাগবে।

Check Also

২৬ বছর পর কারামুক্ত ‘শিবির ক্যাডার’ নাছির

নিজস্ব প্রতিবেদক :দীর্ঘ ২৬ বছর পর কারামুক্ত হলেন চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ ‘শিবির ক্যাডার’ নাছির উদ্দিন ওরফে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *