বাঁশখালীতে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে ২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে পুঁইছড়ি ইজ্জতিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আবদুল খালেক (৬৭)।
জানা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন ১১ নং পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মুছা ফকির বাড়ীর আবদুল খালেক (৬৭) পার্শ্ববর্তী এলাকার বিশিষ্ট জমিদার ও সাবেক ইউপি সদস্য ফজল সাহেবের ব্যক্তিগত কেরানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বুধবার (১৫ মার্চ) রাতে ফজল সাহেবের ছোট ছেলে আরিফ চাষীদের নিকট বন্টনের জন্য লবণ বিক্রির ২ লাখ টাকা নগদে আবদুল খালেকের নিকট প্রদান করেন। তিনি উক্ত টাকা চাষীদের নিকট বন্টনের জন্য পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ী থেকে বের হয়ে পুঁইছড়ি ইজ্জতিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আসলে আপন ভাই আবদুল মাবুদ(৫৮), আবদুল মাবুদের ছেলে নূরুল কাদের(২৩), আবদুল মাবুদের জামাতা
আবুল বশর (৩৮) এবং অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জন লোক হাতে লোহার রড ও লাঠি নিয়ে তার গতিরোধ করে সাথে থাকা নগদ ২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আবদুল খালেক টাকা এবং নিজের জীবন রক্ষার জন্য চিৎকার দিয়ে বাড়ীর দিকে পালাতে চাইলে আবুল বশর লোহার রড দিয়ে তার ডান হাতে আঘাত করায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সবাই তাকে বেদম পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারালে তার সাথে থাকা নগদ ২ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে এলাকার লোকজন তার পরিবারের সদস্যদেরকে জানালে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃদ্ধ আবদুল খালেক বলেন, আমি ছোট সাহেবের (আরিফ) কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে রাতে বাড়ীতে রেখেছি সেটা আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জানতো। কিন্তু টাকার লোভে আমার আপন ভাই, ভাতিজা, ভাতিজি জামাই এমন জঘন্য কাজ করতে পারবে কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিরোধ নেই, শুধু টাকার লোভে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার উপর তারা যখন হামলা করে তখনও আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো আপন ভাই এত খারাপ হতে পারে। টাকা এবং নিজের জীবন বাঁচাতে আমি চিৎকার দিলে ৬ সুতার রড দিয়ে ঘাড়ে এবং হাতে আঘাতের পর আমার জ্ঞান ছিলো না, আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।থানায় অভিযোগ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২ ছেলে আমার চিকিৎসার জন্য দিনরাত হাসপাতালে। তাই থানায় অভিযোগ করতে কেউ যেতে পারেনি। আমার একটাই দাবী, প্রশাসন যেন অপরাধীদেরকে কোন প্রকার ছাড় না দেয়।
আবদুল খালেকের ছেলে মো: ফোরকান বলেন, আমার আব্বা খুবই সহজ-সরল মানুষ। আমার চাচা তো আপনজন, এমনকি এলাকায় কারো সাথে উনার কোন প্রকার ঝামেলা নেই। আমার বাবা দীর্ঘদিন যাবত ফজল সাহেবের বিশ্বস্থ কেরানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেছেন। বিশ্বস্থতার কারণেই বিভিন্ন দিকে নগদ টাকার লেনদেন আব্বাকে দিয়ে করাতেন। টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়টি আমার চাচার মাথায় থাকার কথা না, আমরা ধারণা করছি এটার মূল পরিকল্পনাকারী চাচাতো বোনের স্বামী আবুল বশর। লোভের বশবর্তী হয়ে আমার চাচা নিজের বড় ভাইকে হাত ভেঙ্গে রক্তাক্ত করতেও দ্বিধা বোধ করলেন না। বাবার চিকিৎসা কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে মামলা করতে থানায় যেতে পারিনি, আগামীকাল (রবিবার) থানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবী এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার যেন সুষ্ঠু বিচার হয়।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল উদ্দীন বলেন, এই অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে বাদীপক্ষ এসেছেন তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।